শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জিয়ার স্বপ্ন ও বিএনপি : সময়ের প্রয়োজন

জিয়ার স্বপ্ন ও বিএনপি : সময়ের প্রয়োজন

শায়রুল কবির খান:

আসছে ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ বিএনপি’র ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ সঙ্কটের সময় গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ওই দলের মাধ্যমে নিজে নেতৃত্ব দিয়ে ওই সঙ্কটের মোকাবেলা করে গেছেন।

আর বাংলাদেশের বর্তমান সঙ্কটে তার হতে গড়া দল বিএনপি ও উত্তরসূরী দেশনেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর দায়িত্ব বর্তেছে সময়ের চাহিদা পূর্ণ করবার।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ঐতিহাসিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাফল্য পেয়েছেন।
বিশেষ করে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিকদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারাটা অনুধাবন করেই সবটুকু করে ছিলেন মাত্র সাড়ে চার বছরের মধ্যে।

‘৭৫-এর আওয়ামী লীগের বিপরীতে যে রাজনৈতিক শক্তিটা ছিল তারা তখন বাতাসে ঘুরছিল।
বাকশাল গঠন হবার পর অন্য রাজনৈতিক দল সেভাবে না থাকলেও জাতীয় পযার্য়ে রাজনীতিকরা ছিলেন।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার জন্মদাতা মজলুম জননেতা মৌলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, শাহ্ আজিজুর রহমান, মোহন মিয়া, সবুর খান, মশিউর রহমান জাদু মিয়া, আলি আহাদ, কমরেড ফরহাদ, কমরেড মনি সিংসহ জাতীয় পর্যায়ে অনেক ছাত্র ও যুব নেতৃবৃন্দ তখন ছিলেন। কিন্তু তাদের একক কিংবা সমন্বিত নেতৃত্বে এই শক্তিটা তখন একত্রিত হয়নি। হয়েছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তাদের সহযোগিতায়।

শহীদ জিয়া নাগরিকদের মাঝে স্বপ্ন বুনেছিলেন। নিজে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে কোদাল হাতে নিয়ে মাটি কাটলেন, কৃষকের সাথে কৃষি কাজে যুক্ত হলেন; শিল্প কলকারখানায় শ্রমিকের সাথে যুক্ত হলেন। প্রত্যেকেই যেন স্বাবলম্বী হয়ে স্ব-নির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারে সেজন্য তিনি “১৯ দফা কর্মসূচি” দিলেন।

৪২ বছর বয়সে মাত্র সাড়ে চার বছরে তলাবিহীন ঝুড়ি উপাধি পাওয়া রাষ্ট্রের নাগরিকরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাবার জন্য তিনি কোথায় হাতের ছোঁয়া লাগাননি? শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, বাসস্থান, নারী,শিশু, কিশোর, যুবক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজে যুক্ত করেছিলেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শুরু হলো শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণ।

সুখী ও সমৃদ্ধ পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয় নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ৭৭ সালে “জাতীয় জনসংখ্যা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট”। প্রতিষ্ঠা করেন “কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ বাংলাদেশ” (আইসিডিডিআরবি)। তার সময়ে বাংলাদেশে তৈরী হয় ডায়রিয়া রোগীর খাবার স্যলাইন (ওরস্যালাইন)।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার জন্য কৃষকদের কৃষি উপকরণ সহজ লভ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। ৮০ সালে দশ মাস বৃষ্টি হয়নি খড়ায় দুর্ভিক্ষ হতে পারে বিশেষজ্ঞদের অভিমত ছিল। অথচ বাস্তবে বাংলাদেশ ১৯৮১ সালে দুই লক্ষ টন চাল রফতানি করেছে।

নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূর্ণ করতে সঠিক পরিকল্পনা মাফিক কাজ করেছেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে চালিকাশক্তি মূলত কৃষি আর শিল্প। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ায় কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি ছিল। বাংলাদেশে তখনকার একমাত্র মৌলিক শিল্প পাটকলগুলোও স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয়করণের ফলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল।

এই পরিস্থিতিতে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করলেন তৈরী পোশাক রফতানির। তার হাত ধরে শুরু হয় এই খাত।
আরো একটি খাতের সূচনা হয় তার হাত দিয়ে। তা হলো বিদেশে শ্রম রফতানি, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে অদক্ষ ও দক্ষ শ্রমিক পাঠানো মধ্যে দিয়ে। তাদের মাধ্যমেই আজকের অর্থনৈতিক ভিত তৈরি হয়েছে।
এই কাজগুলো পরে ধারাবাহিকভাবে হয়েছে, হচ্ছে ও হবেও।

এখানে উল্লেখ্য, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম তার নিজস্ব সত্তাটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মজবুত করেছেন গভীর গাঁথুনির মধ্যে দিয়ে।
স্বাধীনতার সূচনা ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে, ৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শহীদ হয়ে যারা মাতৃভাষা রক্ষা করে গিয়েছেন সেই শহীদ দিবসকে সামনে রেখে ‘৭৬ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রর্বতন করেন “একুশে পদক”।
এরপর স্বাধীনতার শহীদের রক্তের মর্যাদা রক্ষার প্রতিজ্ঞা নিয়ে ‘৭৭ সালে প্রর্বতন করেন “স্বাধীনতার পদক”।
দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে ধরা হয় এই অঙ্গণে “জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার” দেয়া হয় ‘৭৬ সালে।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানে সহধর্মিণী সুযোগ্য উত্তরসূরী গণতন্ত্রের মাতা ৯ বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচিত সরকার গঠন করে সংসদীয় সরকার ফিরিয়ে আনলেন।
তার হাত ধরে ‘৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে “বুদ্ধিজীবী সৃতিসৌধ”। পরে আবার ২০০১ সালে বিএনপি সরকারে এসে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

আজকের সঙ্কটে রাজনৈতিক শক্তি এখন আর বাতাসে ঘুরছে না। ঘুরছে জাতীয়তাবাদীর শক্তির নেতৃত্ব দানকারী বিএনপি’র চারপাশে। তাই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে মোকাবেলা করবেন এই প্রত্যাশা সকল দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নাগরিকদের।

লেখক : সহ-সভাপতি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা- জাসাস

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877